উন্নয়ন কাজে অনগ্রসরতার দায় কাহার?
গোটা দেশে উন্নয়নের জন্য যেই সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাহার বৃহত্ একটি অংশ অব্যবহূত থাকিয়া যায়। অর্থাত্ উন্নয়নকাজে ঐ সকল বরাদ্দ একরকম নিষ্ফলা হইয়া থাকে। এই কারণে এইখাতের কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দেশের উন্নয়নকাজে অগ্রগতির দিকে কঠোর নজরদারির প্রয়োজন। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, এই উন্নয়নখাতের প্রকৃত চিত্রটি আরও স্বচ্ছ হইলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও বৃদ্ধি পাইত। ইহাও দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলা যায় যে, বরাদ্দকৃত উন্নয়নকাজের একটি বৃহত্ অংশ স্থবির হইয়া থাকিবার পাশাপাশি যেইটুকু কাজ সম্পন্ন হয়, সেইটুকুও অনেক ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন হয় না। নানান রকম অনিয়ম আর ফাঁকফোকর দিয়া কাজটি শেষ করা হয়; কিন্তু কেন এইরকম হইবে? এইসব কাজে তদারকির জন্য সরকারি কর্মকর্তারা কি করিয়া থাকেন? এমন নহে যে, এই তদারকি করা হয় ঢাকা হইতে। প্রতিটি জেলায় সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কাজের কর্মকর্তারা রহিয়াছেন। সংশ্লিষ্ট কাজের বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তারা তাহাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করিলে কোনো একটি উন্নয়নকাজও অসম্পূর্ণ থাকিবার কথা নহে। অথচ নিয়মিত দেখভাল কিংবা তদারকির অভাবে উন্নয়নকাজের অগ্রগতির বিষয়টি কোথাও কোথাও চরম আকার ধারণ করিতেছে। এই সমস্যা সারা দেশেই কমবেশি দেখা যাইতেছে। আর এই দায়িত্বহীনতার প্রতিফলন পাওয়া যায় নানাভাবে, যাহার একটি উপসর্গ হইল রডের পরিবর্তে বাঁশ কিংবা কাঠের গোঁজা!
অনেক ক্ষেত্রে যথাসময়ে কাজ না করিবার জন্য কেবল ঠিকাদারকেই দায়ী করা হয়। কোনো কাজের ওয়ার্ক অর্ডারে দুই বত্সরের শর্ত দেওয়া হইলে কাজটি সময়সীমা শেষ হইবার আগেই টেন্ডার বাতিল করাটাও কতখানি যুক্তিযুক্ত? কেহ যদি ২৪ মাসে কাজ শেষ করিবার ওয়ার্ক অর্ডার লইয়া ১৫ মাসে কাজ শুরু করে এবং সেই অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ করিয়া তাহা যথাসময়ে কাজ শেষ করিতে চাহে, তবে তাহাতে সমস্যা কোথায়? যুক্তি দেখানো যাইতে পারে—একটি কাজের পরিধি অনুযায়ী তাহা শেষ করিতে যৌক্তিকভাবে দুই বত্সর তথা ২৪ মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়। ধরা যাক, একটি খাল কাটিতে একশত শ্রমিক দিয়া এক বত্সর লাগিবে। সেই অনুযায়ী সময় দেওয়া হইল; কিন্তু কোনো ঠিকাদার যদি ছয় মাস দেরি করিয়া কাজ শুরু করেন, জনবল কমপক্ষে দ্বিগুণ করিয়া তাহা শেষ করেন, তবে সমস্যা কোথায়? তাহা ছাড়া, বরাদ্দকৃত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করিতে না পারিলে ঠিকাদারকে জরিমানা করিবার সুযোগ আছে। কাজ লইবার সময় একজন ঠিকাদারকে জামানত রাখিয়াই কাজটি গ্রহণ করিতে হয়। অন্যদিকে যথাসময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করিতে পারিলে পরবর্তীসময়ে সেই ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্তও করা যাইতে পারে; কিন্তু কাজটি শেষ করিবার জন্য বরাদ্দকৃত সময়সীমা শেষ হইবার আগেই ওই টেন্ডার বাতিল করাটা কতখানি যুক্তিযুক্ত হইবে?
কোনো উন্নয়ন কাজে গাফিলতির জন্য ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাইতেই পারে; কিন্তু তদারকির দায়িত্বে যাহারা ছিলেন, তাহাদের কি দায় নাই? জবাবদিহিতা নাই? রাতারাতি সব দোষ ঠিকাদার নন্দঘোষের? এইভাবে চলিতে পারে না। মনে রাখা দরকার, সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারই দক্ষতার প্রথম শর্ত। উন্নয়নকাজে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।